আশ্চর্য্য রকম গুনের অধিকারী লজ্জাবতী লতা

আশ্চর্য্য রকম গুনের অধিকারী লজ্জাবতী লতা
মাহফুজ রাজা,জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ;
“লজ্জাবতীর লতার মত থাকলে লজ্জা মানুষের,
শত শ্রীগুন বৃদ্ধি হতো হুশ হলে বিবেকের “
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে শত অনুসন্ধানেও চোঁখে পড়েনা অত্যন্ত শক্তিশালী গুনের বাহক লজ্জাবতী গাছের।হোসেনপুরের প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে উপকারী গাছ লজ্জাবতী। সকলের অতি পরিচিত এ গাছ মানুষের নানা উপকারে আসা ছাড়াও ফসলী জমির জৈব সারের চাহিদা পূরণ করে থাকে। কোন কিছুর স্পর্স পাওয়া মাত্রই লজ্জায় এর পাতাগুলো গুটিয়ে যায় জন্যই গ্রাম-বাংলায় এটি লজ্জাবতী হিসেবে অধিক পরিচিত। এক সময় হোসেনপুরের প্রতিটি  গ্রামের পতিত ভিটা, মাঠ-ময়দান ও -ফসলের আইলসহ আনাচে-কানাচে প্রচুর সাদা ও লাল জাতের লজ্জাবতীর গাছ দেখা যেত।
কৃষক বাতেন মিয়া,আব্দুর রাজ্জাক,হাবুল মিয়াসহ অনেকেই জানান,
ফসলী জমিতে এ গাছ জৈব সারের চাহিদা পূরণ করে কিন্তু এখন এটা দূর্লভ ।  মানুষের অযত্ন আর অবহেলায় এই উপকারী লজ্জাবতী গাছ আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
লজ্জাবতী, স্থানীয়ভাবে একে লজ্জাবতী, সমঙ্গা,
লজ্জালু, অঞ্জলিকারিকাও বলা হয় বলে জানা যায়।  লজ্জাবতী আগাছা বা ঔষধি গাছ। কাণ্ড লতানো শাখা প্রশাখায় ভরা এবং কাঁটাযুক্ত। এ গাছ লালচে রংয়ের। এ গাছের কাণ্ড কিছুটা শক্ত। সহজে ভাঙ্গে না বরং পেচিয়ে টানলে ছিড়ে যায়। পাতা কয়েক জোড়া পাতা বিপ্রতীপভাবে থাকে। অনেকটা তেতুল পাতার মত।
পাতা সরু ও লম্বাটে, সংখ্যায় ২ থেকে ২০ জোড়া। উপপত্র কাঁটায় ভরা,এর পাতা ও ফুল ব্যবহার করা
 হয়। এর অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য তত্বমতে পাওয়া এর গুন বহুমানে,
হাত–পা জ্বালা, অর্শ্ব, রক্তপিত্ত, যোনির ক্ষত, নাড়ি
 সরে আসায়, আঁধার যোনি ক্ষতে, আমাশয়, দমকা ভেদ, মল কাঠিন্যে,
 দাঁতের মাড়ি ক্ষতে, বগলে দুর্গন্ধ, কানের পুঁজে, গ্রন্থিবাত, কুজ্জতা বিভিন্ন রোগে লজ্জাবতী বেশ উপকারী।
প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, এ গাছ যে এলাকায় থাকে সেখানে সাপের উপদ্রুপ হয়না। সাপের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বাড়ি-ঘর এবং গৃহপালিত জন্তুর আবাসস্থলে এ গাছ ঝুলিয়ে রাখলে শতভাগ সুফল পাওয়া যায়।
 হাত–পা জ্বালা নিরাময়ে: হাত–পা জ্বালার স
ঙ্গে শরীরে জ্বর থাকে এটা সাধারণত বর্ষা ও
 শরৎকালে পিত্ত বিকারে দেখা দেয় এ ক্ষেত্রে
 লজ্জাবতীর গাছ মূল পাতা ১০ গ্রাম ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সেবন
 করলে উপকারে লাগে।
অর্শ্ব রোগে: অর্শ্বের বলিতে জ্বালা বেশি। ঝাল না খেয়েও যেন সেই রকম যন্ত্রণা। তার সঙ্গে রক্তস্রাবও বেশি হতে থাকে। এক্ষেত্রে গাছে ও মূলে ১০ গ্রাম আন্দাজ এক কাপ
 দুধ ও তিন কাপ পানি এক সঙ্গে মিশিয়ে একত্রে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রত্যেক
দিন সকাল–বিকেল দু’বার খেতে হবে। ছাগলের দুধ হলে ভাল হবে।
নাড়ি সরে আসা: বহু প্রসূতি সন্তান প্রসবের সময়
ধাত্রীর অস্বাবধানতায় নাড়ি সরে যায়, উঁচু হয়ে বসতে গেলে অস্বস্তিবোধ করে। এক্ষেত্রে লজ্জাবতীর ১০ গ্রাম আন্দাজ গাছপাতা চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে
ছেঁকে নিয়ে এটা প্রতিদিন সকাল–বিকেল দু’বার
 খেলে ঠিক হয়ে যাবে।ইত্যাদি বহু প্রকার রোগ নিরাময়ে কার্যকরী এই গাছ, সরকার অনুমোদিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।
কৃষি তথ্য সার্ভিস (কেআইএস)এর সূত্র মতে,
প্রধানত: দুইভাবে, বীজ থেকে অথবা পুষ্ট লতা কেটে তা রোপণের মাধ্যমে চাষাবাদ করা যায়। আগস্ট মাস হতে লতায় ফুল ধরা আরম্ভ করে এবং ক্রমান্বয়ে সেপ্টেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ফল পাকা আরম্ভ করে। এ সময় পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজের জীবনী শক্তি খুব বেশি। সংরক্ষিত বীজে ৫০ বছর পর্যন্ত অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে। মাইমোসার বীজ খুব ছোট। প্রতি ১০০০টা বীজের ওজন প্রায় ৬ গ্রাম।

আপনি আরও পড়তে পারেন